*ইসলামে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার স্থান*
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ইসলামে বেশ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং বিভিন্নভাবে পরিচ্ছন্নতার অনুশীলন দেওয়া হয়েছে । পবিত্র কোরআন ও হাদিসে পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ আছে। নিম্নে সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোকপাত করা হল-
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার আরবী প্রতিশব্দ হলো 'ত্বহারাত' অর্থাৎ কুফরী ও আল্লাহর নাফরমানি সহ আভ্যন্তরীণ যাবতীয় পাপাচার ও নোংরামি থেকে মুক্ত হওয়ার যেমন জোর দেয়, তেমনি সব রকমের বাহ্যিক অপরিচ্ছন্নতা থেকেও মুক্ত রাখতে গুরুত্ব দেয়। মহান আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
"ان الله يحب التوابين ويحب المتطهرين"(السوره البقره الاية )
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসা পবিত্রতা অর্জনকারীদের । (সূরা বাকারা আয়াত নং: 222)
এমনকি কোরআন শরীফের মধ্যে আল্লাহ তা'আলা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম কে আহ্বান করে বলেন-
يا ايها المدثر قم فانذر وربك فكبر وثيابك فطهر"(المدثر)"
অর্থাৎ হে উপর- আবরণী (চাদর) আবৃতকারী। দন্ডায়মান হয়ে যান। অতঃপর সতর্ক করুন। এবং আপনার পালনকর্তার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। আপনার পোশাক পবিত্র রাখুন। (সূরা আল মুদ্দাসসির)
উক্ত আয়াতের মধ্যে যদিও মহানবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম কে নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে, কিন্তু এখানে আদেশ অনির্দিষ্ট অর্থাৎ সকল উম্মতের জন্য।
নবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম নিজে পরিস্কার পোশাক পরিধান করতেন। এবং ঈমানদার ব্যক্তিগণ ইহা অনুসরণ করেছেন। পোশাকের পরিছন্নতা ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এতটাই গুরুত্ব যে ওযু অথবা স্নানের ব্যবহার করা এক ফোটা জলও যদি কাপড় অথবা শরীরের ওপর পড়ে তা শরীয়তে মাকরুহ বা অপছন্দনীয় বলে গণ্য।
ইসলাম ধর্মে ইবাদতের স্থান গুলিকেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিশেষ স্থানে রাখা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে কাবা গৃহের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার তাগিদ দিয়েছেন। কোরআন শরীফে উল্লেখ আছে যে,
" وعهدنا الى ابراهيم واسماعيل ان طهرا بيتي للطائفين والعاكفين والركع والسجود"(البقره)
অর্থাৎ আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইল আলাইহিমাস সালামকে তাগিদ দিয়েছি, আমার ঘরকে খুব পবিত্র করো-তাওয়াফকারী, ইতেকাফকারী এবং রুকু ও সাজদা কারিদের জন্য। (সূরা আল বাকারা আয়াত নং 125)
উক্ত আয়াত দ্বারা কাবা শরীফকে পরিষ্কার পরিছন্নতা রাখার আদেশ প্রদান করা হয়েছে। এই আদেশ যদিও কাবা শরীফ সম্পর্কে নির্দিষ্ট, কিন্তু পৃথিবীর সমস্ত মসজিদ অথবা সমস্ত এবাদত এর স্থান উক্ত আয়াতের অন্তর্গত।
হাদিসেও বিভিন্ন উপায়ে পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং নানাবিধ শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এমনকি পরিছন্নতা রক্ষাকে ঈমানের অংশ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আবু মালিক আশ'আরী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেন- "النظافه نصف الايمان" অর্থাৎ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক। (আল হাদিস)
নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন যে, ঈমানের সত্তরের অধিক অংশ আছে এবং তন্মধ্যে সর্বোত্তম ছোট অংশটি হলো "রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তুকে সরিয়ে দেওয়া"اماطة الطريق عن الاذي"(আল হাদিস)
মানুষের পরিছন্নতা ও সৌন্দর্য রক্ষায় শরীয়তে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা হাদীস ও ফিকহার গ্রন্থ গুলির "পবিত্রতা" অধ্যায় অধ্যয়ন করলে সহজে বোঝা যাবে। নখ কাটা, গোঁফ ছোট করা, বাহুর নিচের চুল উপড়ানো এমনকি গুপ্তাঙ্গের লোম পরিষ্কার করা সহ কোনটাই বাদ যায় নি।
ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখতে হাদিসে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সাঈদ ইবনে মুসাইয়িব(রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রতাকে পছন্দ করেন। আল্লাহর পরিচ্ছন্ন, তিনি পরিছন্নতাকে পছন্দ করেন। আল্লাহ মহৎ, তিনি মহত্বকে পছন্দ করেন। আল্লাহ বদান্য, তিনি বদান্যতাকে পছন্দ করেন। অতএব তোমরা তোমাদের (ঘরের) উঠোন গুলো পরিচ্ছন্ন রাখবে। (তিরমিজি, হাদিস নং 2799)
খাদ্য গ্রহণের আগে হাত ধৌত করা আবশ্যক। না হলে বিভিন্ন ধরনের অসুখ দেখা দিতে পারে। ইসলাম খাওয়ার আগে হাত ধোয়ার ব্যাপারে খুবই সতর্ক করেছেন। হাদীসের কিতাবে আছে যে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম পানাহারের আগে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নিতেন। (মুসনাদে ইমাম আহমদ)
অন্য হাদিসে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম খাওয়ার পর কুল্লি করতেন এবং হাত ধৌত করতেন। (মুসনাদে ইমাম আহমদ)
ইসলামে ব্যক্তির পরিছন্নতা, গৃহের পরিছন্নতা ও পরিপার্শ্বের পরিছন্নতা এবং পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা, এক কথায় কোনটাই বাদ যায়নি।
বাস্তবে ইসলাম একটি সৌন্দর্য ও সম্মানীয় ধর্ম। এতে পরিষ্কার-পরিছন্নতা ব্যতীত মানুষের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের সঠিক সমাধান সুষ্ঠভাবে দেওয়া হয়েছে। হে আল্লাহ তাআলা! তুমি আমাদের সবাইকে ইসলামের সঠিক সমাধান মোতাবেক জীবন-যাপনের তৌফিক দান কর এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় নিমজ্জিত হতে সদা সর্বদা আগ্রহী করে তুল। আমীন সুম্মা আমীন......
লেখক: মোঃ জামালউদ্দিন আলাই
সমসপুর, হেমতাবাদ ,
উত্তর দিনাজপুর , পশ্চিমবঙ্গ।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ইসলামে বেশ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং বিভিন্নভাবে পরিচ্ছন্নতার অনুশীলন দেওয়া হয়েছে । পবিত্র কোরআন ও হাদিসে পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ আছে। নিম্নে সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোকপাত করা হল-
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার আরবী প্রতিশব্দ হলো 'ত্বহারাত' অর্থাৎ কুফরী ও আল্লাহর নাফরমানি সহ আভ্যন্তরীণ যাবতীয় পাপাচার ও নোংরামি থেকে মুক্ত হওয়ার যেমন জোর দেয়, তেমনি সব রকমের বাহ্যিক অপরিচ্ছন্নতা থেকেও মুক্ত রাখতে গুরুত্ব দেয়। মহান আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
"ان الله يحب التوابين ويحب المتطهرين"(السوره البقره الاية )
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসা পবিত্রতা অর্জনকারীদের । (সূরা বাকারা আয়াত নং: 222)
এমনকি কোরআন শরীফের মধ্যে আল্লাহ তা'আলা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম কে আহ্বান করে বলেন-
يا ايها المدثر قم فانذر وربك فكبر وثيابك فطهر"(المدثر)"
অর্থাৎ হে উপর- আবরণী (চাদর) আবৃতকারী। দন্ডায়মান হয়ে যান। অতঃপর সতর্ক করুন। এবং আপনার পালনকর্তার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। আপনার পোশাক পবিত্র রাখুন। (সূরা আল মুদ্দাসসির)
উক্ত আয়াতের মধ্যে যদিও মহানবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম কে নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে, কিন্তু এখানে আদেশ অনির্দিষ্ট অর্থাৎ সকল উম্মতের জন্য।
নবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম নিজে পরিস্কার পোশাক পরিধান করতেন। এবং ঈমানদার ব্যক্তিগণ ইহা অনুসরণ করেছেন। পোশাকের পরিছন্নতা ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এতটাই গুরুত্ব যে ওযু অথবা স্নানের ব্যবহার করা এক ফোটা জলও যদি কাপড় অথবা শরীরের ওপর পড়ে তা শরীয়তে মাকরুহ বা অপছন্দনীয় বলে গণ্য।
ইসলাম ধর্মে ইবাদতের স্থান গুলিকেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিশেষ স্থানে রাখা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে কাবা গৃহের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার তাগিদ দিয়েছেন। কোরআন শরীফে উল্লেখ আছে যে,
" وعهدنا الى ابراهيم واسماعيل ان طهرا بيتي للطائفين والعاكفين والركع والسجود"(البقره)
অর্থাৎ আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইল আলাইহিমাস সালামকে তাগিদ দিয়েছি, আমার ঘরকে খুব পবিত্র করো-তাওয়াফকারী, ইতেকাফকারী এবং রুকু ও সাজদা কারিদের জন্য। (সূরা আল বাকারা আয়াত নং 125)
উক্ত আয়াত দ্বারা কাবা শরীফকে পরিষ্কার পরিছন্নতা রাখার আদেশ প্রদান করা হয়েছে। এই আদেশ যদিও কাবা শরীফ সম্পর্কে নির্দিষ্ট, কিন্তু পৃথিবীর সমস্ত মসজিদ অথবা সমস্ত এবাদত এর স্থান উক্ত আয়াতের অন্তর্গত।
হাদিসেও বিভিন্ন উপায়ে পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং নানাবিধ শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এমনকি পরিছন্নতা রক্ষাকে ঈমানের অংশ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আবু মালিক আশ'আরী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেন- "النظافه نصف الايمان" অর্থাৎ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক। (আল হাদিস)
নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন যে, ঈমানের সত্তরের অধিক অংশ আছে এবং তন্মধ্যে সর্বোত্তম ছোট অংশটি হলো "রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তুকে সরিয়ে দেওয়া"اماطة الطريق عن الاذي"(আল হাদিস)
মানুষের পরিছন্নতা ও সৌন্দর্য রক্ষায় শরীয়তে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা হাদীস ও ফিকহার গ্রন্থ গুলির "পবিত্রতা" অধ্যায় অধ্যয়ন করলে সহজে বোঝা যাবে। নখ কাটা, গোঁফ ছোট করা, বাহুর নিচের চুল উপড়ানো এমনকি গুপ্তাঙ্গের লোম পরিষ্কার করা সহ কোনটাই বাদ যায় নি।
ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখতে হাদিসে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সাঈদ ইবনে মুসাইয়িব(রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রতাকে পছন্দ করেন। আল্লাহর পরিচ্ছন্ন, তিনি পরিছন্নতাকে পছন্দ করেন। আল্লাহ মহৎ, তিনি মহত্বকে পছন্দ করেন। আল্লাহ বদান্য, তিনি বদান্যতাকে পছন্দ করেন। অতএব তোমরা তোমাদের (ঘরের) উঠোন গুলো পরিচ্ছন্ন রাখবে। (তিরমিজি, হাদিস নং 2799)
খাদ্য গ্রহণের আগে হাত ধৌত করা আবশ্যক। না হলে বিভিন্ন ধরনের অসুখ দেখা দিতে পারে। ইসলাম খাওয়ার আগে হাত ধোয়ার ব্যাপারে খুবই সতর্ক করেছেন। হাদীসের কিতাবে আছে যে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম পানাহারের আগে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নিতেন। (মুসনাদে ইমাম আহমদ)
অন্য হাদিসে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম খাওয়ার পর কুল্লি করতেন এবং হাত ধৌত করতেন। (মুসনাদে ইমাম আহমদ)
ইসলামে ব্যক্তির পরিছন্নতা, গৃহের পরিছন্নতা ও পরিপার্শ্বের পরিছন্নতা এবং পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা, এক কথায় কোনটাই বাদ যায়নি।
বাস্তবে ইসলাম একটি সৌন্দর্য ও সম্মানীয় ধর্ম। এতে পরিষ্কার-পরিছন্নতা ব্যতীত মানুষের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের সঠিক সমাধান সুষ্ঠভাবে দেওয়া হয়েছে। হে আল্লাহ তাআলা! তুমি আমাদের সবাইকে ইসলামের সঠিক সমাধান মোতাবেক জীবন-যাপনের তৌফিক দান কর এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় নিমজ্জিত হতে সদা সর্বদা আগ্রহী করে তুল। আমীন সুম্মা আমীন......
লেখক: মোঃ জামালউদ্দিন আলাই
সমসপুর, হেমতাবাদ ,
উত্তর দিনাজপুর , পশ্চিমবঙ্গ।
0 تبصرے:
ایک تبصرہ شائع کریں